*ভালবাসার খেলাঘর *

- 'কি হল এত ডাকছি শুনতে পাচ্ছ না ?'
- সরি আমাকে বলছেন ?
- এখানে বৃষ্টি নামের আরো কেউ আছে নাকি ?
- আমার জানা নেই। কিছু বলবেন ?
- না হলে কি শুধু তোমার সুন্দর মুখ দেখার জন্য এত
ডাকলাম ?
- কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি না ।আপনার
কথা শুনব কেন ?
- কারণ তোমার সাথে আমি পরিচিত হতে চাই তাই ।
- কিন্তু আমি চাই না ।গুড বাই
বলেই বৃষ্টি দ্রুত সামনের দিকে হেটে চলল ।
- আরে আরে যাচ্ছ কেন ?
আকাশ একটু দৌড়ে আবার বৃষ্টির সাথে হাটতে লাগল।
- রাগ করলে নাকি ? আমি আকাশ।
- আপনি আকাশ না বাতাস তা জেনে আমার কি ?
- আমার সম্পর্কে না জানলে আমার সাথে মিশবে কি করে ?
- আপনার সাথে কোন দুঃখে মিশতে যাব আমি ?
- তোমার দুঃখে না আমার সুখে ।
- আপনার সুখ দেখার দায়িত্ব আমার না ।
- এবার ঐ দায়িত্বটা তোমাকেই নিতে হবে ।
- জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেন।
- ঘুমালে যে তোমাকে স্বপ্ন দেখতে পারি না তাই জেগে জেগে দেখি
- আপনি স্বপ্ন দেখেন আমি গেলাম ,বাই ।
- ঠিক আছে যাও ,কাল নিশ্চয় দেখা হবে ।
বৃষ্টি সাথে সাথে একটা সিএনজিতে উঠে চলে গেল । পরেরদিন একই সময় কলেজ থেকে ফেরার পথে আবারো আকাশ এসে হাজির ।
- হাই বৃষ্টি ,আমার জন্য ওয়েট করছ ?
- আমার কি আর কোন কাজ নাই যে আপনার জন্য ওয়েট করব ?
- আপনি আপনিটা ছেড়ে কথা বলা যায় না ?
- তার কি দরকার ?
- দরকার আছে ।প্রথমত আমি আপনি বলাটা পছন্দ করি না। দ্বিতীয়ত দুদিন পর যাকে তুমি করে বলবেই তাকে দুদিন আগে থেকেই না হয় বললে ।
- ঠিক আছে এবার থেকে চেষ্টা করব ।
এভাবে রোজ ওরা মেলামেশা করতে করতে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে সারাক্ষণ প্রত্যেকটা কাজে দুজন দুজনকে জানাতো ।

প্রায় ছয় মাস পর একদিন........
- বৃষ্টি এতদিনেও কিন্তু একটা কথা বললে না ।
- কি কথা ?আমি তো তোমাকে সবই বলি ।
- হুম তা বল কিন্তু যেটা আমি তোমাকে হাজার বার বলি সেটাই তো বললে না ।
বৃষ্টি এতদিনের সব ঘনিষ্ঠতা মেলামেশা ভুলে নিজের অজান্তেই অনেক serious হয়ে উঠল কারণ আকাশ হিন্দু । অবুঝ বৃষ্টি এবার অনেকটা ম্যাচ্যুউরড হয়ে উঠল । আকাশ হিন্দু জেনেও বৃষ্টি শুধুমাত্র ভাললাগার আবেগেই মিশে গেছে ওর সাথে । ভেবেছিল মুসলমান হিন্দুর সম্পর্কটা হবার
নয় ।এতদিন আকাশকেও একথা বলেছে বৃষ্টি । কিন্তু
আজ একি হতে চলেছে ??
- দেখো আকাশ তুমি অনেক সুন্দর করে কথা বল । আমার ভাললাগে আমরা না হয় বন্ধু হয়েই থাকলাম। আমাদের সম্পর্কের পরিণতি কোনদিন সুখের হবে না ।তাই সেটা না হওয়ায় ভাল ।
- আমি তোমার জন্য সব করতে পারব বৃষ্টি । তোমাকে অনেক ভালবাসি আমি ।প্লিজ তুমি একবার বল আমাকে ভালবাস ।
- তুমি আমার জন্য মুসলমান হতে পারবে ?
পারবে বাবা মাকে ছাড়তে ?
- হ্যা পারব ।
- এসব তোমার আবেগের কথা ।তুমি কোনদিন তা পারবে না ।
- আমি তোমার জন্য সব পারব ।তুমি শুধু বল আমাকে ভালবাস।
- না ।আমি বলতে পারব না ।

বৃষ্টি ওখান থেকে উঠে চলে গেল । বাড়ি ফিরেও বৃষ্টির ভাল লাগছে না ।আকাশের ফোন ম্যাসেজ কিছুই নাই ।এ জন্যই বোধহয় ভাল লাগছে না ।তবু অপেক্ষা হয়ত আকাশ ফোন দিবে । সারাদিন কেটে গেল তবু আকাশের কোন খবরই নাই । একটু চিন্তাও হচ্ছে । বৃষ্টিও আগে নিজে থেকে দিবে না ।সুতরাং অপেক্ষা । এভাবে ঐদিনটা কেটে গেল ।পরদিন দুপুরে আকাশ ফোন দিয়েছে ।
- হ্যালো
- কাল থেকে কি একবারও আমার কথা মনে পড়ে নি ?
- হ্যা পড়েছে ।
- একটাবার ফোন দিলেও তো পারতে ।
বৃষ্টি চুপ করে আছে ।আকাশের কথাগুলো কেমন যেন লাগছে ।মনে হচ্ছে কাদছে ।
- বৃষ্টি শুধু একবার বল প্লিজ ।আমার খুব শুনতে ইচ্ছা করছে ।প্লিজ একবার বল ।
- কি হয়েছে আকাশ ?এমন করছ কেন তুমি ?
- কিছু হয়নি আমার ।এবার হবে ।
বলেই লাইনটা কেটে দিল ।একটু পর একটা এমএমএস এল ।লালবর্ণ চোখ আর হাত কাটার ছবি ।
বৃষ্টি এমনিতেই অনেক ইমোশনাল ।
এগুলো দেখে আরো ইমোশনাল হয়ে পড়ল ।ভাবল আকাশ হয়ত সত্যিই ওর জন্য অনেক কষ্ট পাচ্ছে । কিন্তু কিছুই ভাবতে পারছে না বৃষ্টি। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টিই এবার আকাশকে ফোন করে পাগলামি না করার জন্য বলল ।তখনও আকাশ বারবার বলছে প্লিজ একবার বল তুমি আমাকে ভালবাস ।বৃষ্টি আর ইমোশন ধরে রাখতে পারছে না ।
- আচ্ছা ঠিক আছে ।
- কি ঠিক আছে ?প্লিজ বল বৃষ্টি
এই প্রথমবার বৃষ্টি কাউকে I LOVE U বলছে কিন্তু কিছুতেই একবারে বলতে পারছে না ।
অনেক কষ্টে একবার পরিষ্কারভাবে I LOVE U বলল ।আকাশ তো ভিষণ খুশি ।এক মুহুর্তে যেন ও কষ্টের জগত্ থেকে বেরিয়ে এল । এরপর চলতে থাকে দুই ধর্মের ছেলে মেয়ের লাভ স্টোরি । আকাশ নিজে থেকেই বৃষ্টিকে ছেড়ে না যাওয়ার অনেক প্রমিজ করে ।কিন্তু বৃষ্টি তখনও মেনে নিয়েছিল এই সম্পর্ক টিকবে না ।কিন্তু আকাশ খুব নিশ্চতভাবে বলত "আমি যদি তোমার না হই তবে কারো হবো না"
এক পর্যয়ে বৃষ্টিও খুব serious হয়ে পড়ে । আকাশকে ছাড়া নিজের জীবন অন্য কারো সাথে ভাবতে চায় না ।এভাবে চলতে চলতে এক বছর কেটে গেল । বছরের শেষের দিকে আকাশ কেমন যেন বদলাতে শুরু করল ।বৃষ্টির সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করতে লাগল ।বৃষ্টি শুধুমাত্র ভালবাসার জন্য সব
মেনে নিতে থাকল ।কারণ ঝগড়ার পর দু তিন দিন কথা বন্ধ থাকলেও আবার ঠিক হয়ে যেত ।আকাশ বলত ওগুলো রাগের কথা ।এমন ছোট ছোট রাগ অভিমান ধীরে ধীরে বিরাট আকার ধারণ করতে থাকল ।আকাশ ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে কথা বলা কমিয়ে দিল ।তবু বৃষ্টি খুব বেশী মন খারাপ করত না কারণ ও ভাবত সম্পর্ক একটু পুরাতন হয়ে গেছে তাই হয়ত ফরমালিটি নেই আর । একবার প্রায় এক সপ্তাহ ওদের কথা হয় না ।আর এ সময়ই একদিন হঠাত্ রাস্তায় আকাশের এক বন্ধুর সাথে দেখা হল বৃষ্টির ।
- হ্যালো ভাইয়া ।
- আরেহ বৃষ্টি কেমন আছিস ?
- ভাল ।
- মন খারাপ ?
- আসলে কিছুদিন ধরে আকাশের সাথে কথা হয় না ।
- ঐ বাজে ছেলেটার জন্য তুই কষ্ট পাচ্ছিস ?
বৃষ্টি চমকে উঠে বলল বাজে ছেলে মানে ?
ও হ্যা আরেকটা কথা অনেকদিন থেকে লক্ষ করছি ও আপনার কথায় রেগে যায় ।আজ আপনিও ওকে বাজে বলছেন ।কি হয়েছে আপনাদের ?
- শুনবি ?
- হ্যা শুনব ।আমার জানা দরকার।
- তাহলে শোন ।ও একটা প্লেবয় ।অনেক মেয়ের সাথে ওর সম্পর্ক । ওর মজা শেষ তো প্রত্যেকটা সম্পর্কও শেষ ?
কথাটা শুনে বৃষ্টির চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল ।হাত পা কাপতে থাকল ।মাথাটা ঘুরছে।যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল ।
- কি বলছেন আপনি ?
- হ্যা এটাই সত্য ।
- আগে বলেননি কেন এসব?আপনিই তো বলেছিলেন ও ভাল ছেলে ।
- তখন আমিও জানতাম না রে। তাহলে তোকে এই ভুলটা করতে দিতাম না ।সেদিন থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব শেষ করে দিয়েছি। আজ আসিরে কাজ আছে। বৃষ্টি বুঝতে পারছিল না এখন কি করা উচিত্।পাগল মন বিশ্বাস করতে চায় নি তাই বৃষ্টি আকাশকে সব বলে।আকাশ চুপ করে থাকল আর এই নীরবতাই বৃষ্টিকে বারবার বলছে আকাশ ঠক,প্রতারক। হয়ত অনেক কিছু বলার ছিল আকাশকে কিন্তু বৃষ্টি কিছুই বলতে পারল না ।শুধু বলল "খেলার জন্য আমাকেই বেছে নিলে আকাশ?" ভালবাসার খেলাঘর থেকে বেরিয়ে এল শুধুই অশ্রু নিয়ে।মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ল বৃষ্টি।ঘৃণায় জর্জরিত মন তবু ভুলতে পারে না আকাশের প্রতারণা।এখনো বৃষ্টির দুচোখে ঘৃণার মেঘ থেকে কষ্টের অশ্রু ঝরে ।