চাক ওরিয়ারের বয়স তখন ৬০। আর এ বয়সেই একটা নতুন প্রেমে পড়েছেন। না অন্য
কিছুর না। প্রেমে পড়েছেন এক জলজ্যান্ত নারীরই। সে এক উথালপাতাল প্রেম।
শীতের সকালে সেই নারীর সঙ্গে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। আকাশে ঝলমলে রোদ।
ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়িটি ছুটছে নাপা ভ্যালির পাশ দিয়ে। চালক ওরিয়ার নিজেই।
পেছনের সিটে অবহেলায় পড়ে আছে ক্যামেরাটি। রাস্তার দুই পাশে সাঁই সাঁই করে
চলে যাচ্ছে সবুজ ঘাসের কার্পেট। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ছোট ছোট পাহাড়। তার ওপর
আবার সবুজের ঢেউ খেলে দিগন্তে হারিয়ে গেছে কিশোরী আঙুরের লতা, ঘাস। টানা
রোদে অদ্ভুত আলো ছড়াচ্ছে ঘাসগুলো। আর এ আলোর ধাঁধায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গাড়ি
থামিয়ে ফেলেন ওরিয়ার। হাতে তুলে নেন প্রিয় ক্যামেরাটি। নিচে সবুজ কার্পেট
আর নীল আকাশে পেঁজা তুলার মতো খণ্ড খণ্ড মেঘ। দারুণ এক কম্বিনেশন। ঘোর লাগা
অবস্থাতেই চটপট কিছু ছবি তুলে ফেলেন তিনি। আর ওরিয়ার অজান্তেই তুলে ফেলেন
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রদর্শিত ছবিটি।
যাঁরা উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করেন তাঁরা কম্পিউটার খুললেই ডিফল্ট হিসেবে যে ওয়ালপেপারটি চোখের সামনে দেখতে পান সেটিই এই ছবি। উইন্ডোজ যার নাম দিয়েছে ব্লিস। হিসাব অনুযায়ী যেটি পৃথিবীর বিলিয়নের বেশি লোক দেখেছে বলে মনে করা হয়। যাদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা এটি আদতে কোনো ছবি নয়, সিম্পলি কম্পিউটার গ্রাফিকসের কারুকাজ। কিন্তু ‘তুমি কি কেবলই ছবি’র মতো এটি সত্যি সত্যিই কেবলই ছবি, যেখানে বোলানো হয়নি কম্পিউটারের তুলির কোনো পরশ।
যুক্তরাষ্ট্রের নাপা ভ্যালির এ সবুজের বিস্তৃতি প্রাকৃতিকভাবে বেশ আকর্ষণীয় হওয়ায় এখানে ফটোগ্রাফারদের পদধূলি পড়ে হরহামেশাই। তাঁরা আসেন, ছবি তোলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কারও ভাগ্যেই নীল-সাদা আকাশ আর সবুজ ঘাস অদ্ভুত সুর ধরা দেয়নি। ভাগ্যদেবীর প্রসন্ন দৃষ্টি থাকায় সেই সুর লেন্স হয়ে ফুটে ওঠে ওরিয়ারের ক্যামেরার মনিটরে। ছবিটি দেখে বেশ পুলকিত হলেন ওরিয়ার, তবে তখনো তিনি ধারণা করতে পারেননি তাঁর এ ছবিটিই ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হতে যাচ্ছে। হতে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রদর্শিত একটি ছবি। তবে একটি ভালো ছবি তুলে ফটোগ্রাফার যেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকেন, এ ক্ষেত্রে অবশ্য তেমনটি হয়নি। ওরিয়ারের ভাষায়, ‘আসলে আমার নতুন প্রেমিকার সঙ্গ নিয়ে উত্তেজনা তখন আমার মধ্যে। ছবিটি দেখে মনে হয়নি যে খুব অসাধারণ কিছু ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। তাই সেটা নিয়ে বেশি না ভেবে ক্যামেরা গুটিয়ে তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠি।’
এরপর তিনি ভুলেই যান ছবিটির কথা। আরও শত শত ছবির সঙ্গে এটিও শীতনিদ্রায় চলে যায়। একদিন হয়তো বা পুরোপুরিই ভুলে যেতেন। কিন্তু যে ছবি একদিন পৃথিবী বিখ্যাত হবে সেটা কীভাবে নিজের অস্তিত্ব জানান না দিয়ে থাকতে পারে। ওয়ান ফাইন মর্নিং ওরিয়ারকে ফোন করল তার এজেন্সি। কোথা থেকে যেন ওরিয়ারের ছবিটি দেখে বেশ পছন্দ করেছেন মাইক্রোসফটের এক কর্মকর্তা। তিনি সেটা নিয়ে আবার তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সবারই ছবিটি খুব পছন্দ হলো। সিদ্ধান্ত হলো এ ছবিটি তাদের নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এক্সপির ডিফল্ট ওয়ালপেপার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আর তাই মাইক্রোসফটের কর্মকর্তারা এজেন্সির মাধ্যমেই চেয়েছেন ছবিটির মূল কপি। চুক্তি করে ছবিটির স্বত্ব কিনে নিতে চায় মাইক্রোসফট। তবে ছবিটির জন্য ঠিক কত অর্থ পরিশোধ করা হবে সেটি গোপন রাখতে হবে। ওরিয়ার রাজি। চুক্তি সই হলো। সেই চুক্তিতে স্পষ্ট বলে আছে, টাকার এ অঙ্কটি কেউই প্রকাশ করতে পারবে না! তবে ওরিয়ার বলেছেন, এটা একটা অবিশ্বাস্য অঙ্কের টাকা তাঁর কাছে। তবে একটা ধারণা দেওয়ার জন্য বলেছেন, তিনি যে অঙ্কের টাকা পেয়েছেন এখন কাজ করছেন এমন ফটোগ্রাফারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি অঙ্কের টাকা পেয়েছে কেবল একটিই ছবি। তার মানে তার ছবিটি এ মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া ছবি। আর সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল যে ছবিটি সেটি হলো প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন আর মনিকা লিউনস্কির একটি ছবি। যেখানে বিল ক্লিনটন জড়িয়ে ধরে আছেন মনিকা লিউনস্কিকে।
তবে যাঁরা ভাবছেন, ওরিয়ার এমনি একটা ছবি তুললেন আর সেটা বিখ্যাত হয়ে গেল তাঁদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ওরিয়ার আসলে একেবারে জাত ফটোগ্রাফার। ক্যারিয়ারের ২৫টি বছর তিনি কাটিয়েছেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে। ফটোগ্রাফির কাজে ঘুরেছেন পৃথিবীর ৩০টি দেশ আর আমেরিকার প্রতিটি স্টেটে। ক্লাসিকাল ওয়াইন নিয়ে নয়টি বই আছে তাঁর যার মধ্যে নাপা ভ্যালি: দ্য ল্যান্ড, দ্য ওয়াইন, দ্য পিপল হয়েছে বেস্ট সেলার।
ওরিয়ার ফটোগ্রাফি শুরু করেছিলেন তাঁর ১০ বছর বয়সে ব্রাউনির বক্স ক্যামেরা দিয়ে। তাঁর বেড়ে ওঠা মিসৌরিতে। সে সময় ওরিয়ার স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে হবেন পাইলট। স্বপ্নের পেছনে ছুটে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পেয়ে যান বিমান চালানোর লাইসেন্স। বর্ণিল জীবনে কাজ করেছেন তিনি কখনো স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে, কখনো আলাস্কার জীবনের গল্প পত্রিকার পাতায় তুলে ধরে।
সে সময় ডেইলি মেইল-এ এক সাক্ষাৎকারে চাক ওরিয়ার বলেছিলেন, ‘ছবিটি তোলার সময় একটুও ধারণা করতে পারিনি, এটিই হতে যাচ্ছে একটি “আইকোনিক ফটো”। বাস্তবতা হচ্ছে, এটিই সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত ছবি। এটা যদি চীনের কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রামে নিয়ে গিয়ে যদি কাউকে দেখানো হয় তবে সে-ও যেমন চিনতে পারবে, তেমনি পেরুর ব্যস্ত রাস্তায় যদি কাউকে ছবিটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় এটি কিসের ছবি, সে-ও এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবে। আর ফটোগ্রাফাররা সাধারণত তাঁদের তৈরি করা ছবি দিয়েই বিখ্যাত হয়ে থাকেন। আর আমি বিখ্যাত শুধু সঠিক সময় সঠিক জায়গায় থাকার কারণে। এই ছবিটা আমার তৈরি না। প্রকৃতিই এটা তৈরি করেছে। আমি শুধু সঠিক সময়ে সে ছবিটা তুলতে পেরেছি।’
বিশ্বের কোটি উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহারকারী তাদের কম্পিউটার চালুর সঙ্গে সঙ্গে চাক ওরিয়ারের তোলা ছবিটি দেখতে পান। তবে চাক নিজে তাঁর কম্পিউটার চালুর পর এ ছবিটি দেখার সুযোগ পান না, কারণ তিনি ব্যবহার করেন অ্যাপলের ম্যাক, যেটি অ্যাপলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমে চলে! আর সময়ও এখন পরিবর্তন হয়েছে। নাপা ভ্যালির সে জায়গাটি এখন আর ঘাসে ভরা নেই, সেটা এখন আঙুরের বাগান। আর উইন্ডোজও এক্সপির পরবর্তী সংস্করণ উইন্ডোজ সেভেন বাজারে ছেড়েছে।
৭১ বছর বয়সী ওরিয়ার তাই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন আবার এমন একটি ছবি তুলে বিক্রি করার, যা সব ফটোগ্রাফারেরই মনের গোপন ও প্রকাশ্য ইচ্ছা। সেই সঙ্গে ওরিয়ার এও জানেন এই একটি ছবিই তাঁকে অমর করে রাখবে। তাঁর মৃত্যুর সময়ও সবাই এই ছবির কারণেই তাঁকে আবার স্মরণ করবে।
সূত্র: নাপাভ্যালিরেজিস্টার, উইকিপিডিয়া, মাসাবেল ও ওয়াইনভিউজডটকম
যাঁরা উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করেন তাঁরা কম্পিউটার খুললেই ডিফল্ট হিসেবে যে ওয়ালপেপারটি চোখের সামনে দেখতে পান সেটিই এই ছবি। উইন্ডোজ যার নাম দিয়েছে ব্লিস। হিসাব অনুযায়ী যেটি পৃথিবীর বিলিয়নের বেশি লোক দেখেছে বলে মনে করা হয়। যাদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা এটি আদতে কোনো ছবি নয়, সিম্পলি কম্পিউটার গ্রাফিকসের কারুকাজ। কিন্তু ‘তুমি কি কেবলই ছবি’র মতো এটি সত্যি সত্যিই কেবলই ছবি, যেখানে বোলানো হয়নি কম্পিউটারের তুলির কোনো পরশ।
যুক্তরাষ্ট্রের নাপা ভ্যালির এ সবুজের বিস্তৃতি প্রাকৃতিকভাবে বেশ আকর্ষণীয় হওয়ায় এখানে ফটোগ্রাফারদের পদধূলি পড়ে হরহামেশাই। তাঁরা আসেন, ছবি তোলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কারও ভাগ্যেই নীল-সাদা আকাশ আর সবুজ ঘাস অদ্ভুত সুর ধরা দেয়নি। ভাগ্যদেবীর প্রসন্ন দৃষ্টি থাকায় সেই সুর লেন্স হয়ে ফুটে ওঠে ওরিয়ারের ক্যামেরার মনিটরে। ছবিটি দেখে বেশ পুলকিত হলেন ওরিয়ার, তবে তখনো তিনি ধারণা করতে পারেননি তাঁর এ ছবিটিই ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হতে যাচ্ছে। হতে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রদর্শিত একটি ছবি। তবে একটি ভালো ছবি তুলে ফটোগ্রাফার যেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকেন, এ ক্ষেত্রে অবশ্য তেমনটি হয়নি। ওরিয়ারের ভাষায়, ‘আসলে আমার নতুন প্রেমিকার সঙ্গ নিয়ে উত্তেজনা তখন আমার মধ্যে। ছবিটি দেখে মনে হয়নি যে খুব অসাধারণ কিছু ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। তাই সেটা নিয়ে বেশি না ভেবে ক্যামেরা গুটিয়ে তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠি।’
এরপর তিনি ভুলেই যান ছবিটির কথা। আরও শত শত ছবির সঙ্গে এটিও শীতনিদ্রায় চলে যায়। একদিন হয়তো বা পুরোপুরিই ভুলে যেতেন। কিন্তু যে ছবি একদিন পৃথিবী বিখ্যাত হবে সেটা কীভাবে নিজের অস্তিত্ব জানান না দিয়ে থাকতে পারে। ওয়ান ফাইন মর্নিং ওরিয়ারকে ফোন করল তার এজেন্সি। কোথা থেকে যেন ওরিয়ারের ছবিটি দেখে বেশ পছন্দ করেছেন মাইক্রোসফটের এক কর্মকর্তা। তিনি সেটা নিয়ে আবার তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সবারই ছবিটি খুব পছন্দ হলো। সিদ্ধান্ত হলো এ ছবিটি তাদের নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এক্সপির ডিফল্ট ওয়ালপেপার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আর তাই মাইক্রোসফটের কর্মকর্তারা এজেন্সির মাধ্যমেই চেয়েছেন ছবিটির মূল কপি। চুক্তি করে ছবিটির স্বত্ব কিনে নিতে চায় মাইক্রোসফট। তবে ছবিটির জন্য ঠিক কত অর্থ পরিশোধ করা হবে সেটি গোপন রাখতে হবে। ওরিয়ার রাজি। চুক্তি সই হলো। সেই চুক্তিতে স্পষ্ট বলে আছে, টাকার এ অঙ্কটি কেউই প্রকাশ করতে পারবে না! তবে ওরিয়ার বলেছেন, এটা একটা অবিশ্বাস্য অঙ্কের টাকা তাঁর কাছে। তবে একটা ধারণা দেওয়ার জন্য বলেছেন, তিনি যে অঙ্কের টাকা পেয়েছেন এখন কাজ করছেন এমন ফটোগ্রাফারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি অঙ্কের টাকা পেয়েছে কেবল একটিই ছবি। তার মানে তার ছবিটি এ মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া ছবি। আর সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল যে ছবিটি সেটি হলো প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন আর মনিকা লিউনস্কির একটি ছবি। যেখানে বিল ক্লিনটন জড়িয়ে ধরে আছেন মনিকা লিউনস্কিকে।
তবে যাঁরা ভাবছেন, ওরিয়ার এমনি একটা ছবি তুললেন আর সেটা বিখ্যাত হয়ে গেল তাঁদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ওরিয়ার আসলে একেবারে জাত ফটোগ্রাফার। ক্যারিয়ারের ২৫টি বছর তিনি কাটিয়েছেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে। ফটোগ্রাফির কাজে ঘুরেছেন পৃথিবীর ৩০টি দেশ আর আমেরিকার প্রতিটি স্টেটে। ক্লাসিকাল ওয়াইন নিয়ে নয়টি বই আছে তাঁর যার মধ্যে নাপা ভ্যালি: দ্য ল্যান্ড, দ্য ওয়াইন, দ্য পিপল হয়েছে বেস্ট সেলার।
ওরিয়ার ফটোগ্রাফি শুরু করেছিলেন তাঁর ১০ বছর বয়সে ব্রাউনির বক্স ক্যামেরা দিয়ে। তাঁর বেড়ে ওঠা মিসৌরিতে। সে সময় ওরিয়ার স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে হবেন পাইলট। স্বপ্নের পেছনে ছুটে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পেয়ে যান বিমান চালানোর লাইসেন্স। বর্ণিল জীবনে কাজ করেছেন তিনি কখনো স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে, কখনো আলাস্কার জীবনের গল্প পত্রিকার পাতায় তুলে ধরে।
সে সময় ডেইলি মেইল-এ এক সাক্ষাৎকারে চাক ওরিয়ার বলেছিলেন, ‘ছবিটি তোলার সময় একটুও ধারণা করতে পারিনি, এটিই হতে যাচ্ছে একটি “আইকোনিক ফটো”। বাস্তবতা হচ্ছে, এটিই সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত ছবি। এটা যদি চীনের কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রামে নিয়ে গিয়ে যদি কাউকে দেখানো হয় তবে সে-ও যেমন চিনতে পারবে, তেমনি পেরুর ব্যস্ত রাস্তায় যদি কাউকে ছবিটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় এটি কিসের ছবি, সে-ও এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবে। আর ফটোগ্রাফাররা সাধারণত তাঁদের তৈরি করা ছবি দিয়েই বিখ্যাত হয়ে থাকেন। আর আমি বিখ্যাত শুধু সঠিক সময় সঠিক জায়গায় থাকার কারণে। এই ছবিটা আমার তৈরি না। প্রকৃতিই এটা তৈরি করেছে। আমি শুধু সঠিক সময়ে সে ছবিটা তুলতে পেরেছি।’
বিশ্বের কোটি উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহারকারী তাদের কম্পিউটার চালুর সঙ্গে সঙ্গে চাক ওরিয়ারের তোলা ছবিটি দেখতে পান। তবে চাক নিজে তাঁর কম্পিউটার চালুর পর এ ছবিটি দেখার সুযোগ পান না, কারণ তিনি ব্যবহার করেন অ্যাপলের ম্যাক, যেটি অ্যাপলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমে চলে! আর সময়ও এখন পরিবর্তন হয়েছে। নাপা ভ্যালির সে জায়গাটি এখন আর ঘাসে ভরা নেই, সেটা এখন আঙুরের বাগান। আর উইন্ডোজও এক্সপির পরবর্তী সংস্করণ উইন্ডোজ সেভেন বাজারে ছেড়েছে।
৭১ বছর বয়সী ওরিয়ার তাই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন আবার এমন একটি ছবি তুলে বিক্রি করার, যা সব ফটোগ্রাফারেরই মনের গোপন ও প্রকাশ্য ইচ্ছা। সেই সঙ্গে ওরিয়ার এও জানেন এই একটি ছবিই তাঁকে অমর করে রাখবে। তাঁর মৃত্যুর সময়ও সবাই এই ছবির কারণেই তাঁকে আবার স্মরণ করবে।
সূত্র: নাপাভ্যালিরেজিস্টার, উইকিপিডিয়া, মাসাবেল ও ওয়াইনভিউজডটকম